পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে-পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনি যদি পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে ও পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি সঠিক পোস্টে ক্লিক করেছেন। পাঙ্গাস মাছ বাংলাদেশের  খুবই জনপ্রিয় একটি মাছ। আমাদের দেশের অনেক মানুষ পাঙ্গাস মাছ খেতে পছন্দ করে। পাঙ্গাস মাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে ।

পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে-পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

তবে পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার কিছু অপকারিতা হয়েছে যেমন অনেকের মধ্যে প্রশ্ন জাগে পাঙ্গাস  মাসে কি  এলার্জি আছে এবং এর কি কি অপকারিতা আছে। চলুন এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে ও পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

পেইজ সূচি: পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে ও পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে

আপনারা অনেকেই জানতে চান পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে । হ্যাঁ পাঙ্গাস মাছ খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাঙ্গাস মাছ  আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তবে কিছু কিছু মানুষের জন্য ক্ষেত্রে পাঙ্গাস মাছ খেলে এলার্জির সমস্যা দেখাতে পারে। যাদের অন্য কোন কিছুর প্রতি এলার্জি আছে তাদের ক্ষেত্রে পাঙ্গাস মাছ খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের অন্য কোন মাছে কিংবা কোন সামগ্রিক মাছের প্রতি এলার্জি আছে তাদের পাঙ্গাস মাছ সর্তকতার সাথে খাওয়া উচিত। কেননা পাঙ্গাস মাছ খেলে তাদেরও এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় না।

আমাদের এলার্জির হওয়ার মূল কারণ হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। পাঙ্গাস মাছ থাকা প্রোটিন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে তোলে এর ফলে আমাদের এলার্জি সমস্যা হয়ে থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পাঙ্গাস মাছের এলার্জি হওয়ার প্রধান কারণ হলো পারাভালবুমিন নামক প্রোটিন। এই প্রোটিন পাঙ্গাস মাছ ছাড়াও অনেক মাছের ভেতর দেখা যায়। এই পারাভালবুমিন প্রোটিনের কারণেই মূলত বিভিন্ন মাছে এনার্জি সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীতে যত মানুষ মাছের কারণে এলার্জি সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের প্রায় 4 শতাংশ মানুষ পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার জন্য এলার্জি হয়েছে।

পাঙ্গাস মাছে এলার্জির লক্ষণ ও উপসর্গ

আমাদের শরীরে থাকে উপকারী অ্যান্টিবডি যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণু ধ্বংসের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। অন্যদিকে পাঙ্গাস মাছের রয়েছে এমন এক ধরনের প্রোটিন যা আমাদের শরীরের অ্যান্টিবডি ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করে যার জন্য এলার্জির প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পাঙ্গাস মাছে থাকা প্রোটিন যখন আমাদের শরীরের অ্যান্টিবডি সাথে মিলিত হয় তখন হিস্টামিন নামক এক ধরনের কেমিক্যাল নিঃসরিত হয় যার ফলে অ্যালার্জি দেখা দেয়।

পাঙ্গাস মাছের জন্য এলার্জি বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে পারে। কারুর ক্ষেত্রে এই লক্ষণ তীব্রতর হতে পারে আবার কারুর ক্ষেত্রে হালকা সমস্যা হতে পারে। তবে লক্ষণ যেমনই হোক না কেন এলার্জির সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এনার্জি হওয়ার কিছু লক্ষণ নিচে দেওয়া হল।

  • শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।
  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতন সমস্যা হতে পারে।
  • সারা শরীরে চুলকানি দেখা দিতে পারে।
  • গায়ে লাল লাল ফুসকুড়ি বা চুলকানি দেখা দিতে পারে।
  • হাঁপানির সমস্যা হতে পারে।
  • চোখ চুলকানো বা চোখ বন্ধ হয়ে আসতে পারে।
  • পেট ফাঁপা পেট ব্যথা বমি বমি ভাব অথবা ডায়রিয়ার মতন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • মুখের ভেতর চুলকাতে পারে।

এছাড়াও গুরুতর অবস্থায় রক্তচাপ কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত নেওয়া মতন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর জ্ঞান হারানোর মতন মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এমন অবস্থায় অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার কিছুক্ষণ পরপরই এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। এটি সাধারণত কয় মিনিটের মধ্যেই হয়ে থাকে। অনেক সময় এলার্জির কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এজন্য পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার পরে এলার্জি হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। সুতরাং আমরা পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে এই সম্পর্কে জানলাম।

পাঙ্গাস মাছের পুষ্টিগুণ


পাঙ্গাস মাছ একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার। আমাদের দেশের অনেক মানুষ পাঙ্গাস মাছ খেতে খুব পছন্দ করে। আমাদের শরীরের জন্য পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা আছে। পাঙ্গাস মাছে পুষ্টি গুণে ভরপুর। পাঙ্গাস মাছে প্রচুর আমাদের শরীরের জন্য উপকারী প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

প্রতি ১০০ গ্রাম পাঙ্গাস মাছে রয়েছে 
  • আমিষ ১৫ গ্রাম 
  • ক্যালসিয়াম ১৪ মিলি গ্রাম 
  • ম্যাগনেসিয়াম ২৯ মিলি গ্রাম 
  • ফসফরাস ১৩০ মিলি গ্রাম 
  • জিংক ১ থেকে ২ মিলি গ্রাম 
  • ফ্যাট ১১ মিলি গ্রাম 
গ্রাম প্রতি অ্যামাইনো এসিড রয়েছে ৪৩০ মিলি গ্রাম। ১০০ গ্রাম পাঙ্গাস মাছে রয়েছে ৬৭৬ কিলোক্যালরি, প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড , ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, সেলেনিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি উপকারী পুষ্টিকর উপাদান। তবে পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে এগুলো মাথায় রাখতে হবে।

পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা

উপরে পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে এই সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানবো । পাঙ্গাস মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ওমেগা থ্রি যা আমাদের হার্টের জন্য খুবই উপকারী। পাঙ্গাস মাছে কম ক্যালরি থাকায় ওজন বৃদ্ধির তেমন কোন সম্ভাবনা নেই।

  • প্রোটিনের খুব ভালো উৎস।
  • হৃদরোগের ঝুকি কমাতে সাহায্য করে।
  • হজম শক্তিকে উন্নত করে।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে ।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহায়তা করে ।
  • চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে ।
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
  • রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে ।
  • হাড় ও দাঁত মজবুতে ভালো কাজ করে।
  • পেশির গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

চুলের স্বাস্থ্যের জন্য পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা

চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পাঙ্গাস মাছ খুব ভালো কাজ করে। পাঙ্গাস মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা আমাদের ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যে ভালো রাখে। পাঙ্গাস মাছের তেলের পুষ্টি উপাদান আমাদের চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করে, আমাদের চেহারায় বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে, ত্বকের জন্য উপকারী সিবাম তৈরি করে, চুল পড়া বন্ধ করে ও চুলের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে।

চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা 

পাঙ্গাস মাছ আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নতিতে সহায়তা করে। পাঙ্গাস মাছ আমাদের বয়সের কারণে হওয়া দৃষ্টি শক্তির দুর্বলতা থাকে রক্ষা করে। রাত কানা ভালো করে। আমাদের চোখের রেটিনাকে ভালো রাখে। চোখের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও আমাদের চোখের জন্য পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা অনেক।

ব্যথা নিরাময়ে পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা

পাঙ্গাস মাছে থাকা পুষ্টি গুণ আমাদের শরীরের বিভিন্ন ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে। আমাদের ত্বকের প্রদাহ জনিত রোগের সমস্যা দূর করে।সোরিয়াসিস ও একজিমার মতো সমস্যা ভালো করে। আমাদের শরীরের ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে পারে। এছাড়াও আথ্রাইটিস এর সমস্যার জন্য পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা অনেক।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা 

পাঙ্গাস মাছের তেল আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পাঙ্গাস মাছের তেলের পুষ্টি গুণ আমাদের মস্তিষ্কের উপর খুব ভালো কাজ করে। পাঙ্গাস মাছ আমাদের শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মানসিক চাপ দূর করতে পারে। স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে, বয়স্কদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমায়, কাজ কর্মের মনোযোগ বৃদ্ধি করে। এছাড়াও আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও স্মৃতি শক্তি উন্নত করতে পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা অনেক।

হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা 

পাঙ্গাস মাছের তেলের আমাদের হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য রক্ষায় খুব ভালো কাজ করে। পাঙ্গাস মাছ আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল মাএা কমায়, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হার্ট রেটকে স্বাভাবিক রাখে ও রক্তের ট্রাই গ্লিসারাইডের মাএা কমায় ইত্যাদি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পাঙ্গাস মাছের তেল আমাদের হার্টের রোগ নিরাময় করতে সক্ষম।

দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা 

পাঙ্গাস মাছের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি যা আমাদের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণের মাএাকে বৃদ্ধি করে হাড় ও দাঁত মজবুত করে। ভিটামিন ডি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে বিভিন্ন রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে। হাড়ের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের এনামেল শক্তিশালী করার মাধ্যমে দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, দাঁতের ব্যথা ও বাতের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং আমাদের দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতিতে পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা রয়েছে। পাঙ্গাস মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা আমাদের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

পেশি গঠনে পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা 

পাঙ্গাস মাছ আমাদের শরীরের নতুন পেশি গঠনে ও পেশির মেরামতে সহায়তা করে। পাঙ্গাস মাছে রয়েছে উচ্চ মানের প্রোটিন যা আমাদের শরীরের পেশি গঠনে খুবই কার্যকরী। বিশেষ করে যারা ব্যয়াম করার মধ্যেমে শরীরের পেশি বৃদ্ধি করতে চান তাদের জন্য বেশ উপকারী।

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা 

পাঙ্গাস মাছ আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল এর মাএা কমাতে সাহায্য করে। পাঙ্গাস মাছে কোলেস্টেরল এর মাএা খুবই কম থাকায় যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি আছে তার পাঙ্গাস মাছ খেতে পারেন। পাঙ্গাস মাছে রয়েছে অসম্পৃক্ত ফ্যাট যা আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের কমাতে পারে। 

গর্ভাবস্থায় পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার উপকারিতা

আমাদের দেশে পাঙ্গাস মাছ খুবই জনপ্রিয় ও সহজ লভ্য একটি মাছ। পাঙ্গাস মাছ সহজ লভ্য হওয়ায় এর দাম ও অনেক কম। যার ফলে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষরাও নিজেদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য পাঙ্গাস মাছ খেতে পারে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা অনেক। গর্ভাবস্থায় ভ্রনের সঠিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভ্রনের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়াও পাঙ্গাস মাছে রয়েছে প্রচুর ওমেগা থ্রি যা ভ্রমনের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজে লাগে।

পাঙ্গাস মাছে রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন যা গর্ভস্থ শিশুর পেশি গঠন ও মেরামতে সহায়তা করে। পাঙ্গাস মাছে থাকা আয়রন গর্ভবতী মা ও শিশুর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল যা গর্ভবতী মা ও শিশুর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুব ভালো উপকারী। এজন্য গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে নিয়মিত পাঙ্গাস মাছ খেতে পারেন।

বাচ্চাদের জন্য পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা

পাঙ্গাস মাছ একটি খুবই স্বাস্থ্যকর ও কাটাহিন মাছ। পাঙ্গাস মাছে তেমন কোন কাটা না থাকায় ও পাঙ্গাস মাছের মাংস অনেক নরম হওয়ায় বাচ্চারা পাঙ্গাস মাছ খেতে অনেক পছন্দ করে। পাঙ্গাস মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা শিশুর দেহের পেশি গঠন ও মেরামতের সাহায্য করে। রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে। 

এছাড়াও পাঙ্গাস মাছ রয়েছে প্রচুর  উপকারী পুষ্টি উপাদান যা শিশুর স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভালো কাজ করে। তবে পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা থাকা শর্তেও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে খাওয়ানো উচিত। বিশেষ করে যে বাচ্চাদের পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে তাদের এই মাছ না খাওয়ানো উচিত।

পাঙ্গাস মাছের ক্ষতিকর দিক

পাঙ্গাস মাছ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য। নিয়মিত পাঙ্গাস মাছ খেলে আমাদের শরীরের নানান পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। তবে পাঙ্গাস মাছের ক্ষতিকর দিক ও আছে। বর্তমানে বাজারে পাওয়া অধিকাংশ পাঙ্গাস মাছ পুকুরে কৃত্রিম উপায়ে চাষ করা হয়। পাঙ্গাস মাছ চাষিরা পাঙ্গাস মাছ দ্রুত বড় করার জন্য পাঙ্গাস মাছকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক ও ক্যমিকেল যুক্ত খাবার খাইয়ে থাকে।

এই ক্যমিকেল যুক্ত পাঙ্গাস মাছ খেলে আমাদের শরীরে নানান রোগ ব্যাধি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও পাঙ্গাস মাছ দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। পাঙ্গাস মাছকে অনেক অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো হয় যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় পাঙ্গাস মাছ দ্রুত বড় করার জন্য পাঙ্গাস মাছকে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো। হয় যার ফলে পাঙ্গাস মাছের শরীরে জমা হয় অস্বাস্থ্যকর চর্বি। 

যেই চর্বি খেলে আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। পাঙ্গাস মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন অ্যান্টি বায়োটিক খাওয়ানো হয়। যা আমাদের শরীরের অ্যান্টি বায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে। এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। পাঙ্গাস মাছ খেলে অনেক সময় এলার্জি ও হজমের সমস্যা হতে পারে।

পাঙ্গাস মাছ খেলে কি ক্যান্সার হয়

হ্যাঁ কিছু কিছু পাঙ্গাস মাছ খেলে শরীরে ক্যান্সার হতে পারে। বাণিজ্যিক ভাবে চাষকৃত পাঙ্গাস মাছ অনেক সময় দূষিত ও ক্যমিকেল যুক্ত পানিতে চাষ করা হয়। ফলে পাঙ্গাস মাছের শরীরে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করে। এই ধরনের মাছ খেলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রযোন্ত হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে চাষকৃত ক্যমিকেল যুক্ত পাঙ্গাস মাছ খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। 

এজন্য পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার আগে ভালো ভাবে দেখে নিবেন এই মাছ ক্ষতিকর কোনো পরিবেশ চাষ করা হয়েছে কি না। পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও বিভিন্ন ক্ষতিকর পরিবেশে চাষ ও অস্বাস্থ্যকর কেমিক্যাল যুক্ত খাবার খাওয়ানোর ফলে পাঙ্গাস মাছ খাওয়া মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।

পাঙ্গাস মাছ খেলে কি ওজন বাড়ে

না ভালো মানের কেমিক্যাল ও রাসায়নিক মুক্ত পাঙ্গাস মাছ খেলে ওজন বাড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনাই নেই। ওজন বাড়ার পরিবর্তে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন মাছের তেল আমাদের শরীরের ওজন কমাতে খুব ভালো কাজ করে। পাঙ্গাস মাছের চর্বির পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকায় ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা তেমন নেই বললেই চলে।

পাঙ্গাস মাছ খেলে কি গ্যাস হয়

পাঙ্গাস মাছ একটি খুবই উপকারী পুষ্টি সম্বন্ধ সমৃদ্ধ খাবার যা আমাদের শরীরে নানা পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে। তবে পাঙ্গাস মাছের  ক্ষতিকার দিক আছে। যেমন পাঙ্গাস মাছ খেলে কিছু কিছু মানুষের গ্যাসের সমস্যা বা নানান ধরনের হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো নাও দেখা দিতে পারে।

পাঙ্গাস মাছের প্রোটিন

পাঙ্গাস মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারী প্রোটিন ও অ্যামাইনো এসিড যা আমাদের শরীরের পেশী গঠন ও মেরামতের সহায়তা করে। পাঙ্গাস মাছের রয়েছে উচ্চমানের প্রোটিন যা আমাদের স্বাস্থ্য গঠনে ভালো কাজ করে। কিন্তু পাঙ্গাস মাছের এমন কিছু প্রোটিন আছে যার কারণে আমাদের শরীরে এলার্জির মতন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে পাঙ্গাস মাছ খেলে সবার শরীরে এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না।

পাঙ্গাস মাছের বৈজ্ঞানিক নাম

বর্তমানে আমাদের দেশের মৎস্য বাজারে পাঙ্গাস মাছের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাঙ্গাস মাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল pangasius bocourti। এটি মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার খুবই জনপ্রিয় একটি মাছ। পুষ্টি গুণে ভরপুর এই মাছ টির সহজলভ্যতা, দ্রুত বৃদ্ধি ও তুলনামূলক কম দামের জন্য বিখ্যাত। সর্বপ্রথম পাঙ্গাস মাছের বাণিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয় ১৯৭০ সালে। পরবর্তীতে এটি বাংলাদেশের অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

পাঙ্গাস মাছের বৈশিষ্ট্য

পাঙ্গাস মাছের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যার মাধ্যমে এই মাছ চেনা যায়। পাঙ্গাস মাছ দেখতে লম্বা  ও চিকন আকৃতির। এর গায়ের রং সাদা, হালকা লালচে, হালকা হলদে ও ধূসর বর্ণের। পাঙ্গাস মাছের কোন আঁশ থাকে না। এরা সব ধরনের খাবার খেয়ে থাকে এবং এদের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়। এরা এক ধরনের ক্যাটফিস জাতীয় মাছ।

নদীর পাঙ্গাস মাছ চেনার উপায়

উপরে আমরা পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা, পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে এই সম্পর্কে জানলাম। চলুন এবার নদীর পাঙ্গাস মাছ কিভাবে চিনবেন এই সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসি। পাঙ্গাস মাছ খেতে আমরা অনেকেই পছন্দ করি। তবে আমাদের ভালো করে জেনে খাওয়া উচিত এই পাঙ্গাস মাছ কোথা থেকে এসেছে। কেননা চাষকৃত পাঙ্গাস মাছে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

অন্যদিকে নদীর পাঙ্গাস মাছ খোলা পরিবেশে থাকার কারণে নদীর পাঙ্গাস মাছ খাওয়া নিরাপদ। কেননা নদীর পাঙ্গাস মাছে মানব দেহের জন্য কোন ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে না। এজন্য আমাদের চাষকৃত পাঙ্গাস মাছ ও নদীর পাঙ্গাস মাছের ভেতর পার্থক্য জানা খুবই জরুরী। চলুন এবার জেনে আসা যাক কোনটা নদীর পাঙ্গাস মাছ আর কোনটা চাষের পাঙ্গাস মাছ কিভাবে চিনবেন।

নদীর পাঙ্গাস মাছ ও চাষের পাঙ্গাস মাছের মধ্যে কিছু সাধারন পার্থক্য আছে যার মাধ্যমে আমরা সহজেই সনাক্ত করতে পারি কোনটা নদীর পাঙ্গাস মাছ আর কোনটা নদী পাঙ্গাস মাছ। নদীর পাঙ্গাস মাছের সাধারণত মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত চ্যাপ্টাকৃতির হয়ে থাকে এবং এর পেট চ্যাপ্টা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে পাঙ্গাস মাছের পেট মোটা সেটা চাষের পাঙ্গাশ মাছ আর যেটার পেট চিকনি সেটা নদীর পাঙ্গাস মাছ। নদীর পাঙ্গাস মাছের রং সাদা হয়ে থাকে অন্যদিকে চাষকৃত পাঙ্গাস মাছের রং লাল অথবা ধূসর হয়ে থাকে হয়  চাষের পাঙ্গাস মাছের তুলনায় নদীর পাঙ্গাস মাছ বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে।

কোন মাছে এলার্জি আছে

আমাদের পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে এই সম্পর্কে জানার পাশাপাশি অন্য আর কোন মাছে এলার্জি আছে এই সম্পর্কে জানা উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাঙ্গাস মাছ আর কোন কোন মাছ খেলে আমাদের এলার্জি হতে পারে। সব মাছেই কম বেশি এলার্জি আছে তবে কিছু মাছ খেলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া বেশি দেখা যায়।

যেসব মাছ খেলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে মাছগুলো হল পাঙ্গাস, ইলিশ, রুই, কাতলা, সিং, টেংরা, টুনা, সালমন শুটকি মাছ ও বোয়াল ইত্যাদি। এই মাছ গুলোতে থাকা প্রোটিনের কারণে এলার্জি হতে পারে। সাদা মাংসের মাছ খেলে এলার্জি হতে পারে। ও বিভিন্ন মাছের তেল খেলেও এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

মাছের এলার্জি পরীক্ষা করার উপায়

পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে কিভাবে বুঝবেন। মাছের এলার্জি পরিক্ষা করার কিছু নিয়ম আছে।যার দ্বারা বুঝা যায় কারুর শরীরে মাছের প্রতি এলার্জি আছে কি না। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে নির্দিষ্ট অ্যান্টি বডির উপস্থিত পরিক্ষা করা হয়। এলিমিনেশন ডায়েট এর মাধ্যমে মাছের এলার্জি পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিভিন্ন মাছের অংশ ত্বকে প্রয়োগের মাধ্যমে কোন মাছে এলার্জি আছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

এছাড়াও চিকিৎসক রোগীকে ধিরে ধিরে মাছ খাওয়ানোর মধ্যেমেও কারুর শরীরে মাছের প্রতি এলার্জি আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও আরো কিছু উপায় আছে যেগুলোর মাধ্যমে কারুর শরীরে মাছের প্রতি এলার্জি আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পরবর্তীতে যদি দেখতে পান কোন মাছের প্রতি এলার্জি আছে তাহলে সেই মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

মাছের এলার্জি কি বংশগত

আপনাদের ভেতর অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগেতে পারে পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে বা অন্য কোন মাছে এলার্জি আছে তা কি বংশগত। হ্যাঁ মাছের প্রতি এলার্জি বংশগত হতে পারে। বিশেষ করে যাদের পরিবারের কোন একজন সদস্যর মাছের প্রতি এলার্জি থাকে তাহলে সেই পরিবারের অন্য সদস্যদেরও মাছ খেলে এলার্জি হতে পারে।

মাছের প্রতি এলার্জি কি সারাজীবন থাকে জীবন থাকে

হ্যাঁ মাছের প্রতি এলার্জি সারা জীবন থাকেতে পারে। এলার্জি এমন একটি রোগ যা নিরাময়ের কোন  ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। যাদের নির্দিষ্ট কোন মাছের প্রতি এলার্জি থাকে তাদের সারা জীবন ওই মাছ খেলে এলার্জি হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে মাছের প্রতি এলার্জির তীব্রতা কমে যায়। পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতা আছে। তাদের মধ্যে একটি হলো পাঙ্গাস মাছে কি এলার্জি আছে।

একটি মাছে এলার্জি থাকলে সব মাছে কি এলার্জি হতে পারে

সাধারণত যদি একটি মাছে এলার্জি থাকে তাহলে অন্য অনেক মাছে ও এলার্জি হতে পারে। এলার্জি হওয়ার মূল কারণ মাছে ভিতরে থাকা নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিন যা আমাদের শরীরে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই প্রোটিন অন্য অনেক মাসেও থাকতে পারে। এজন্য এই প্রোটিন যে সকল মাছে থাকবে সে সকল মাছ খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে।

উপসংহার

উপরের আলোচনা থেকে আমরা পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা পাঙ্গাস মাছের কি এলার্জি আছে এই সম্পর্কে জানলাম। যা থেকে আমরা বুঝতে পারি পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা থাকলেও পাঙ্গাস মাছের ক্ষতিকর দিক ও আছে, যেমন পাঙ্গাস মাছ খেলে মাঝে মাঝে এলার্জির প্রতিক্রি য়া দেখা দিতে পারে।

সুতরাং পাঙ্গাস মাছ খেলে যদি এলার্জি প্রতিক্রিটা দেখা যায় তাহলে বিলম্ব না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। কেননা অনেক সময় এলার্জির কারণে জীবন হানি পর্যন্ত ঘটতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url